Skip to main content

সূর্যের দিনে হুমায়ূন আহমেদের বড়ো ভুল!

 সূর্যের দিন উপন্যাসটিতে হুমায়ূন আহমেদ একখানা বড়ো ভুল করেছেন৷ঐতিহাসিক এক বক্তব্যকে বিকৃত করে ফেলেছেন৷ সম্ভবত ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেননি৷ অথবা খেয়াল করেননি৷

এই ভুল আহামরি ভুল হতো না, যদি উপন্যাসটি কিশোর উপন্যাস না-হতো৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসটি সেরা একটা উপন্যাস হয়তো৷ আর ঠিক এ-কারণেই এই ভুলটিকে সিরিয়াসলি নিতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে ন্যারেটিভের তাগিদে৷ কেননা এর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার একটা সূক্ষ্ম প্যাঁচ আছে৷
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঐ ভাষণের এক অংশ তুলে ধরতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন - " আমি যদি তোমাদের মাঝে........... বাংলাকে মুক্ত করে ছাড়ব ইংশাআল্লাহ।" (পৃষ্ঠার ছবি পোস্টে সংযুক্ত)
উল্লেখ্য তিনি এখানে যে "বাংলা" মুক্ত করার কথা তুলেছেন, আমার জানামতে ঐ ভাষণে এমন কথা ছিলো না৷ বরং ছিলো "....এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইংশাআল্লাহ৷"
দুইটা কথার মাঝে তফাৎ বৃহৎ। কেননা প্রথম বয়ান দ্বারা সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা ফুটে উঠে৷ নতুন দেশ তৈরির কথা ফুটে উঠে৷ অথচ আমার জানামতে তখনও নেগোসিয়েশন চলছিলো "পাকিস্তানের" প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে৷ এবং এই নেগোসিয়েশন চলেছিলো ২৩ মার্চ অবধি৷ এই নেগোসিয়েশন হয়ে গেলে বাংলাদেশ তৈরি হতো না৷ সুতরাং নেগোসিয়েশন চলাকালীন সময়েই এমন ঘোষণা হবে না এটাই স্বাভাবিক৷
অপরদিকে দ্বিতীয় বয়ানে যুদ্ধের কোনো বিষয় পাওয়া যায় না৷ পাওয়া যায় না নতুন দেশ তৈরির আকাঙ্খার কথা৷ বরং অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের চিন্তা পাওয়া যায়৷ দেশ তৈরির আকাঙ্খা আর ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন দুটো ভিন্ন হিসেব৷
এই ব্যাপারে দীর্ঘ আলাপ করা গেলেও আর দীর্ঘ করছিনা। ন্যারেটিভ কীভাবে কাজ করে এই ব্যাপারে যারা কনসার্ন তারা বুঝবেন যে এই ছোট্ট একটি শব্দ কিশোর মনে কী প্রভাব ফেলতে পারে৷ সবকিছু বাদ দিলেও ঐতিহাসিক কোনো বক্তব্যের বিকৃতি নিন্দনীয় হিসেবেই বিবেচিত হবে৷
হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমার বরাবরই পছন্দের৷ এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়৷ নিন্দা করার উদ্দেশ্যেও এই আলাপ করিনি৷ শুধুমাত্র জানানোর জন্যই। আমারও জানার ঘাটতি আছে। ভুল নজরে এলে জানাবেন বলে আশাবাদী৷

Comments

Popular posts from this blog

নাজিম উদ দৌলার প্রহেলিকা । Prohelika by Nazim ud doula

  লেখক নাজিম উদ দৌলার সাথে জার্নি শুরু করেছি তার লিখিত "প্রহেলিকা" উপন্যাসিকাটির মাধ্যমে৷ পড়া শেষ৷ একটি থ্রিলার মৌলিক উপন্যাসিকা৷ শহরে বাচ্চাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেকের মাথা ইট অথবা পাথর দিয়ে থেতলে দেয়া৷ অবাক করার বিষয় প্রতিটা লাশের পাশেই পাওয়া যাচ্ছে খুনির ব্যবহৃত জিনিসপত্র৷ খুনি কী তবে এতই বোকা? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো ঘটনা? থ্রিলার গল্পের মাঝেও লেখক প্রেমের ঘটনা কানেক্ট করেছেন৷ চরিত্রগুলোকে করেছেন সাবলীল। এছাড়া মূল আসামীর আসামী হয়ে ওঠার গল্পও তুলে ধরেছেন লজিকালি। বাঙালি গোয়েন্দা যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবেই কথা বলিয়েছেন তিনি। ফ্ল্যাশব্যাকের সাথে গল্পের কানেকশন ভালোই। তবে একটা বিষয় একটু অবাস্তব লেগেছিলো। কাহিনীর টুইস্টগুলো ভালো৷ মজাদার। সাসপেন্সওয়ালা টুইস্ট না হলেও, টুইস্টগুলো মজাদার৷ একেক চরিত্র, একেক বিশেষত্ব, একেক কাহিনী। পুরোটাকে একটা ডটে এনে মিশিয়েছেন নাজিম উদ দৌলা। আর সে ডটটি হলো "ভালোবাসা।" মূল আসামীকে ধরার অনেক আগেই বুঝে যাওয়া যায় আসামীকে। কয়েক লাইনের কথোপকথনে একটু ভালোমতো খেয়াল করলেই বোঝা যায়৷ এছাড়া সেখানে খুনীর একটা দূর্বলতার কথা অনেক বলে দেয়া...

পুফি । হুমায়ূন আহমেদ

বইটা কেনার আগে নাম তেমন শুনিনি। সত্য বলতে খুঁজিও-নি। হুমায়ূন আহমেদের কিছু যেমন আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি কিছু বই আবার আন্ডাররেটেড৷ অবশ্য হুমায়ূন আহমেদ যতগুলো বই লিখেছেন সবগুলো পড়ে মতামত জানানো হয়তো সকলের জন্য সম্ভব না৷ তাই কিছু বই থেকে যায় আড়ালে। "পুফি" বইটি ঠিক তেমন একটি বই। প্রচ্ছদ আর নাম দেখে ভেবেছিলাম শিশুতোষ কোনো উপন্যাস৷ বইয়ের ভেতরে নিজের নাম লিখে রেখেছে মুনতাকা। বাচ্চাসুলভ হাতের লেখা। তাই আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেলাম বইটা শিশুতোষই। এরপর বই পড়া শুরু। শুরুতেই হুমায়ূন আহমেদের সতর্ক বার্তায় চোখ গেলো। সেখানে যা লেখা তার সারাংশ হলো, "বইটি বাচ্চাদের থেকে একশ' হাত দূরে রাখুন। এটা বাচ্চাদের বই না৷ বইয়ের কভার দেখেই বাচ্চাদের বই ভেবেছেন৷ আপনি আসলে মগা৷ কারন আপনি হুমায়ূনের দেয়া নামকে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বাস করেন।" গল্পটা একটা বিড়ালকে নিয়ে। তার নাম "পুফি"৷ এই পুফিকে উপহার হিসেবে পায় অনিকা৷ তার খুব পছন্দ এই বিড়াল। বিড়ালটাও বেশ সভ্য। অনিকার বাবার নাম জোয়ার্দার। জোয়ার্দারের বিড়াল অপছন্দ৷ শুধু বিড়াল না, যেকোনো পশু-পাখি তার অপছন্দ৷ কারন তিনি যখন ছোট তখন এক...

কবি ও বাস্তবতা

 মানুষ ব্লগে কী লেখে আমি তা জানিনা । জানার কথাও না । ব্লগ খোলার কারন একটা সিভিতে ওয়েবসাইটের লিংক দিতে হবে এজন্য ।  ব্লগকে অনেকটা ডায়েরির মতো লাগে । ওপেন ডায়েরি । যে ডায়েরি বাইরে পরে থাকলেও কেউ খুলে দেখে না । অথচ হুট করে এক কৌতুহলী কেউ ডায়েরিটা হাতে নেয় । নিয়ে পড়ে । কী কী লেখা তা দেখে বোঝার চেষ্টা করে । কখনো দুঃখে ডুবে যায় , আবার কখনো অট্টহাসিতে মেতে ওঠে । এরপর লেখকের সম্পর্কে একটা ধারণা জন্ম নেয় তার মাঝে । কিছুসময় পাঠক রচয়িতাকে ভাবতে থাকে । এরপর ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে । একসময় তিনি ভুলে যান ডায়েরির কথা । ডায়েরিটা আবারও পূর্বের মতো পড়ে থাকে । তাকে কেউ আর খুলে না । ধুলোবালি জমে। প্রতিটা মানুষের জীবনে নানা রকম গল্প থাকে । আমারও আছে । সে গল্প আমি চাইলে লিখে রাখতে পারি এখানে । অথবা কিছু দুঃখের কথা লিখতে পারি । লিখতে পারি কতটুকু স্মৃতির বোঝা নিয়ে এখনো জীবিত আমি । কষ্টের কথাগুলোকে লিখে রাখতে পারি এখানে । কিন্তু তাতে লাভ কী? একজন মানুষ আমার দুঃখের কথাগুলো পড়বে এটা কেমন না? দুঃখের কথা শোনার অধিকার শুধুমাত্র প্রিয়তমার । এ বাদে আর কেউ এই কথা পড়ার মানে নিজের কোনো মূল্য না রাখা । আমার কবি...