বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে বেনজিন প্রকাশন। অনুবাদ করেছেন লুৎফুল কায়সার৷ লুৎফুল কায়সারের নাম-ডাক শুনলেও তার অনুবাদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। এই অনুবাদটির মাধ্যমে লুৎফুল কায়সারের অনুবাদের সাথেও পরিচয় হয়। এক কথায় অসাধারণ অনুবাদ৷ যেখানে বর্তমানের কিছু অনুবাদ পড়ে খালি-খালি মনে হচ্ছিলো, বিরক্ত হচ্ছিলাম সেখানে এই ভদ্রলোকের অনুবাদ একেবারে সাবলীল। অনুবাদ তো সেরা-ই সেইসাথে পাঠককে আটকে রাখার জন্য যত উপকরণ দরকার তার সবটুকুই ঢেলেছেন লুৎফুল কায়সার৷ একটু সময়ের জন্যও বিরক্ত হইনি।
লরা নামের একটা মেয়ের গল্প। তার কোনোকিছুর কমতি না থাকলেও একটি দু:খ তার মাঝে ছিলো। তার সমবয়সী কোনো বন্ধু নেই। তার উপর বলতে গেলে এক জনমানবহীন এলাকায় তার বসবাস। কিন্তু এই দু:খ বেশিদিন রইলো না। এক পূর্ণিমার রাতে তার প্রাসাদে আসে একটি মেয়ে। মেয়েটি অসুস্থ থাকায় তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়া হয়৷ এরপর সেই মেয়েটিই হয়ে যায় লরার প্রিয় বন্ধু৷ এর কিছুদিন পর থেকেই ঐ এলাকার মেয়েরা অদ্ভুত রোগে মারা যেতে থাকে৷ কিন্তু কেন? অনেকেই বলছিলো সেখানে বোধহয় কোনো রক্তচোষার নজর পড়েছে! মৃত্যুর পর প্রতিটা মরদেহ হয়ে যেত ফ্যাকাশে!! আসলেই কি রক্তচোষা বলতে কিছু আছে? এদিকে লরাও ক্রমে ক্রমে অসুস্থ হয়ে যায়৷ তার চেহারাও হতে থাকে ফ্যাকাশে!!! তবে কি মৃত্যু তার নিকটে? ওদিকে জেনারেলের ভাতিজিও মারা গিয়েছে৷ কিন্তু কেন? হুট করে সব বদলেই বা যাচ্ছে কেন? মূল ঘটনাই বা কী? কারমিল্লাই বা কে? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
শুরুতেই বলেছি বইটি স্লো-বার্ন হরর জনরার। এই জনরায় হুটহাট কোনো ভৌতিক কোনো কিছু ঘটে না৷ আচমকা আপনাকে ভয় পাইয়ে দেবে না৷ বরং একটা স্বাভাবিক গল্প দিয়ে শুরু হবে৷ আপনি গল্পে মিশে যাবেন হাসতে খেলতে। একসময় মনে হবে কিছু একটা ঠিক নেই। কিন্তু কী ঠিক নেই তা ধরতে পারবেন না৷ এরপর আস্তে আস্তে অস্বস্তিতে পড়বেন। একা থাকলে হালকা ভয় আপনাকে গ্রাস করে নেবে। এই হালকা শীতল ভয় হুটহাট ভয়ের থেকেও বেশি ভয়ংকর। একসময় ঘটনাগুলো আপনার সাবকনশাসে আটকে যাবে৷ ফলে কখনো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবেন৷ কখনো মনে হবে আপনার জানালা দিয়ে হয়তো ঢুকে পড়ছে কারমিল্লা! কখনো কখনো একা থাকতেও ভয় পেতে পারেন।
গল্পটা আমার ভালো লেগেছে৷ এছাড়া বইয়ের টীকাগুলো দুর্দান্ত। অনেক কিছু জানতে পেরেছি টীকাগুলো থেকে৷ লেখক শেষে ধোঁয়াশা রেখেছেন। এর অনেক কারণ থাকতে পারে৷ আমার ধারণা লেখক ইচ্ছে করেই পাঠকদের ভাবাতে চেয়েছেন। লেখক চেয়েছেন পাঠক মাথা ঘামাক। অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য যা আমাদের জানা নেই৷ কিন্তু বই শেষ অবধি পড়লে অনেক ধোঁয়াশাই কেটে যাবে। তবে বইটিতে কিছু এডাল্ট সিনারিও আছে৷ নারীর সমকামিতা আছে৷ তবে বলা হয়েছে লেখক সমকামিতাকে খলনায়িকার চরিত্র হিসেবে রেখেছেন, কারণ তিনি বোঝাতে চান এটা বাজে। লেখক ছিলেন কট্টরপন্থী। আবার অনেকে বলেন, লেখক মূলত নারীবাদের নানান দিক উল্লেখ করতে চেয়েছেন বলে সমকামিতার চরিত্র তৈরি করেছেন। যদিও এই মতটির গ্রহণযোগ্যতা কম।
Comments
Post a Comment