Skip to main content

কারমিল্লা - জোসেফ শেরিড্যান লে ফানু । বাংলা অনুবাদ লুৎফুল কায়সার। Carmilla by J. Sheridan Le Fanu

কারমিল্লা হলো একটি স্লো বার্ন হরর উপন্যাসিকা। লিখেছেন জোসেফ শেরিড্যান লে ফানু৷ ভ্যাম্পায়ার হররে জনপ্রিয় উপন্যাস "ড্রাকুলা" বইটির অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিলো এই "কারমিল্লা।" এই উপন্যাসটিকে নারী ভ্যাম্পায়ারের পথিকৃৎ-ও বলে থাকেন অনেকে৷
বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে বেনজিন প্রকাশন। অনুবাদ করেছেন লুৎফুল কায়সার৷ লুৎফুল কায়সারের নাম-ডাক শুনলেও তার অনুবাদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। এই অনুবাদটির মাধ্যমে লুৎফুল কায়সারের অনুবাদের সাথেও পরিচয় হয়। এক কথায় অসাধারণ অনুবাদ৷ যেখানে বর্তমানের কিছু অনুবাদ পড়ে খালি-খালি মনে হচ্ছিলো, বিরক্ত হচ্ছিলাম সেখানে এই ভদ্রলোকের অনুবাদ একেবারে সাবলীল। অনুবাদ তো সেরা-ই সেইসাথে পাঠককে আটকে রাখার জন্য যত উপকরণ দরকার তার সবটুকুই ঢেলেছেন লুৎফুল কায়সার৷ একটু সময়ের জন্যও বিরক্ত হইনি।
লরা নামের একটা মেয়ের গল্প। তার কোনোকিছুর কমতি না থাকলেও একটি দু:খ তার মাঝে ছিলো। তার সমবয়সী কোনো বন্ধু নেই। তার উপর বলতে গেলে এক জনমানবহীন এলাকায় তার বসবাস। কিন্তু এই দু:খ বেশিদিন রইলো না। এক পূর্ণিমার রাতে তার প্রাসাদে আসে একটি মেয়ে। মেয়েটি অসুস্থ থাকায় তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়া হয়৷ এরপর সেই মেয়েটিই হয়ে যায় লরার প্রিয় বন্ধু৷ এর কিছুদিন পর থেকেই ঐ এলাকার মেয়েরা অদ্ভুত রোগে মারা যেতে থাকে৷ কিন্তু কেন? অনেকেই বলছিলো সেখানে বোধহয় কোনো রক্তচোষার নজর পড়েছে! মৃত্যুর পর প্রতিটা মরদেহ হয়ে যেত ফ্যাকাশে!! আসলেই কি রক্তচোষা বলতে কিছু আছে? এদিকে লরাও ক্রমে ক্রমে অসুস্থ হয়ে যায়৷ তার চেহারাও হতে থাকে ফ্যাকাশে!!! তবে কি মৃত্যু তার নিকটে? ওদিকে জেনারেলের ভাতিজিও মারা গিয়েছে৷ কিন্তু কেন? হুট করে সব বদলেই বা যাচ্ছে কেন? মূল ঘটনাই বা কী? কারমিল্লাই বা কে? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
শুরুতেই বলেছি বইটি স্লো-বার্ন হরর জনরার। এই জনরায় হুটহাট কোনো ভৌতিক কোনো কিছু ঘটে না৷ আচমকা আপনাকে ভয় পাইয়ে দেবে না৷ বরং একটা স্বাভাবিক গল্প দিয়ে শুরু হবে৷ আপনি গল্পে মিশে যাবেন হাসতে খেলতে। একসময় মনে হবে কিছু একটা ঠিক নেই। কিন্তু কী ঠিক নেই তা ধরতে পারবেন না৷ এরপর আস্তে আস্তে অস্বস্তিতে পড়বেন। একা থাকলে হালকা ভয় আপনাকে গ্রাস করে নেবে। এই হালকা শীতল ভয় হুটহাট ভয়ের থেকেও বেশি ভয়ংকর। একসময় ঘটনাগুলো আপনার সাবকনশাসে আটকে যাবে৷ ফলে কখনো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবেন৷ কখনো মনে হবে আপনার জানালা দিয়ে হয়তো ঢুকে পড়ছে কারমিল্লা! কখনো কখনো একা থাকতেও ভয় পেতে পারেন।
গল্পটা আমার ভালো লেগেছে৷ এছাড়া বইয়ের টীকাগুলো দুর্দান্ত। অনেক কিছু জানতে পেরেছি টীকাগুলো থেকে৷ লেখক শেষে ধোঁয়াশা রেখেছেন। এর অনেক কারণ থাকতে পারে৷ আমার ধারণা লেখক ইচ্ছে করেই পাঠকদের ভাবাতে চেয়েছেন। লেখক চেয়েছেন পাঠক মাথা ঘামাক। অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য যা আমাদের জানা নেই৷ কিন্তু বই শেষ অবধি পড়লে অনেক ধোঁয়াশাই কেটে যাবে। তবে বইটিতে কিছু এডাল্ট সিনারিও আছে৷ নারীর সমকামিতা আছে৷ তবে বলা হয়েছে লেখক সমকামিতাকে খলনায়িকার চরিত্র হিসেবে রেখেছেন, কারণ তিনি বোঝাতে চান এটা বাজে। লেখক ছিলেন কট্টরপন্থী। আবার অনেকে বলেন, লেখক মূলত নারীবাদের নানান দিক উল্লেখ করতে চেয়েছেন বলে সমকামিতার চরিত্র তৈরি করেছেন। যদিও এই মতটির গ্রহণযোগ্যতা কম।
এই বইটি সকলের জন্য সাজেস্টেড না৷ শুধুমাত্র হরর টলারেট করতে পারলেই হবে না বরং স্পর্শকাতর বিষয়গুলো মেনে নিতে পারলেই কেবল বইটি পড়ার অনুরোধ থাকবে৷



Comments

Popular posts from this blog

নাজিম উদ দৌলার প্রহেলিকা । Prohelika by Nazim ud doula

  লেখক নাজিম উদ দৌলার সাথে জার্নি শুরু করেছি তার লিখিত "প্রহেলিকা" উপন্যাসিকাটির মাধ্যমে৷ পড়া শেষ৷ একটি থ্রিলার মৌলিক উপন্যাসিকা৷ শহরে বাচ্চাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেকের মাথা ইট অথবা পাথর দিয়ে থেতলে দেয়া৷ অবাক করার বিষয় প্রতিটা লাশের পাশেই পাওয়া যাচ্ছে খুনির ব্যবহৃত জিনিসপত্র৷ খুনি কী তবে এতই বোকা? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো ঘটনা? থ্রিলার গল্পের মাঝেও লেখক প্রেমের ঘটনা কানেক্ট করেছেন৷ চরিত্রগুলোকে করেছেন সাবলীল। এছাড়া মূল আসামীর আসামী হয়ে ওঠার গল্পও তুলে ধরেছেন লজিকালি। বাঙালি গোয়েন্দা যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবেই কথা বলিয়েছেন তিনি। ফ্ল্যাশব্যাকের সাথে গল্পের কানেকশন ভালোই। তবে একটা বিষয় একটু অবাস্তব লেগেছিলো। কাহিনীর টুইস্টগুলো ভালো৷ মজাদার। সাসপেন্সওয়ালা টুইস্ট না হলেও, টুইস্টগুলো মজাদার৷ একেক চরিত্র, একেক বিশেষত্ব, একেক কাহিনী। পুরোটাকে একটা ডটে এনে মিশিয়েছেন নাজিম উদ দৌলা। আর সে ডটটি হলো "ভালোবাসা।" মূল আসামীকে ধরার অনেক আগেই বুঝে যাওয়া যায় আসামীকে। কয়েক লাইনের কথোপকথনে একটু ভালোমতো খেয়াল করলেই বোঝা যায়৷ এছাড়া সেখানে খুনীর একটা দূর্বলতার কথা অনেক বলে দেয়া...

পুফি । হুমায়ূন আহমেদ

বইটা কেনার আগে নাম তেমন শুনিনি। সত্য বলতে খুঁজিও-নি। হুমায়ূন আহমেদের কিছু যেমন আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি কিছু বই আবার আন্ডাররেটেড৷ অবশ্য হুমায়ূন আহমেদ যতগুলো বই লিখেছেন সবগুলো পড়ে মতামত জানানো হয়তো সকলের জন্য সম্ভব না৷ তাই কিছু বই থেকে যায় আড়ালে। "পুফি" বইটি ঠিক তেমন একটি বই। প্রচ্ছদ আর নাম দেখে ভেবেছিলাম শিশুতোষ কোনো উপন্যাস৷ বইয়ের ভেতরে নিজের নাম লিখে রেখেছে মুনতাকা। বাচ্চাসুলভ হাতের লেখা। তাই আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেলাম বইটা শিশুতোষই। এরপর বই পড়া শুরু। শুরুতেই হুমায়ূন আহমেদের সতর্ক বার্তায় চোখ গেলো। সেখানে যা লেখা তার সারাংশ হলো, "বইটি বাচ্চাদের থেকে একশ' হাত দূরে রাখুন। এটা বাচ্চাদের বই না৷ বইয়ের কভার দেখেই বাচ্চাদের বই ভেবেছেন৷ আপনি আসলে মগা৷ কারন আপনি হুমায়ূনের দেয়া নামকে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বাস করেন।" গল্পটা একটা বিড়ালকে নিয়ে। তার নাম "পুফি"৷ এই পুফিকে উপহার হিসেবে পায় অনিকা৷ তার খুব পছন্দ এই বিড়াল। বিড়ালটাও বেশ সভ্য। অনিকার বাবার নাম জোয়ার্দার। জোয়ার্দারের বিড়াল অপছন্দ৷ শুধু বিড়াল না, যেকোনো পশু-পাখি তার অপছন্দ৷ কারন তিনি যখন ছোট তখন এক...

কবি ও বাস্তবতা

 মানুষ ব্লগে কী লেখে আমি তা জানিনা । জানার কথাও না । ব্লগ খোলার কারন একটা সিভিতে ওয়েবসাইটের লিংক দিতে হবে এজন্য ।  ব্লগকে অনেকটা ডায়েরির মতো লাগে । ওপেন ডায়েরি । যে ডায়েরি বাইরে পরে থাকলেও কেউ খুলে দেখে না । অথচ হুট করে এক কৌতুহলী কেউ ডায়েরিটা হাতে নেয় । নিয়ে পড়ে । কী কী লেখা তা দেখে বোঝার চেষ্টা করে । কখনো দুঃখে ডুবে যায় , আবার কখনো অট্টহাসিতে মেতে ওঠে । এরপর লেখকের সম্পর্কে একটা ধারণা জন্ম নেয় তার মাঝে । কিছুসময় পাঠক রচয়িতাকে ভাবতে থাকে । এরপর ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে । একসময় তিনি ভুলে যান ডায়েরির কথা । ডায়েরিটা আবারও পূর্বের মতো পড়ে থাকে । তাকে কেউ আর খুলে না । ধুলোবালি জমে। প্রতিটা মানুষের জীবনে নানা রকম গল্প থাকে । আমারও আছে । সে গল্প আমি চাইলে লিখে রাখতে পারি এখানে । অথবা কিছু দুঃখের কথা লিখতে পারি । লিখতে পারি কতটুকু স্মৃতির বোঝা নিয়ে এখনো জীবিত আমি । কষ্টের কথাগুলোকে লিখে রাখতে পারি এখানে । কিন্তু তাতে লাভ কী? একজন মানুষ আমার দুঃখের কথাগুলো পড়বে এটা কেমন না? দুঃখের কথা শোনার অধিকার শুধুমাত্র প্রিয়তমার । এ বাদে আর কেউ এই কথা পড়ার মানে নিজের কোনো মূল্য না রাখা । আমার কবি...